নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল 2019 কি? What Is CAB Bill Or Citizenship-Amendment-Bill | Full Details
গত কয়েক দিন ধরে রাজ্য রাজনীতি সরগরম নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বা Citizenship-Amendment-Bill নিয়ে । উলুবেড়িয়া , মুর্শিদাবাদ ,মালদা সহ রাজ্যের সর্বত্রই এই বিল নিয়ে প্রতিবাদে অংশ নিয়েছে হাজার হাজার মানুষ । আবার এই CAB Bill কে সমর্থনকারি লোকজনের সংখ্যাও কম নয় । এই অবস্থায় যাদের এখনও এই বিল নিয়ে কোনো পরিস্কার ধারনা নেই , যারা এই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে এখনো কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না ,যাদের মনেও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল 2019 কি জাতীয় প্রশ্ন গুলো ঘুরছে তারা এই বিল নিয়ে পরিস্কার ধারনা পাবেন ।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বা CAB Bill কি ?
1955 সালে ভারতে পাস হয় ভারতীয় নাগরিকত্ব আইন । বর্তমানে অনেক সময় অতিবাহিত হওয়ার জন্য এই আইনে অনেক ফাঁকফোকর রয়ে গেছে। তাই এই আইনটি সংশোধন করার জন্য CAB Bill আনা হয়েছে । এই বিলের মুখ্য উদ্দেশ্য 1955 সালের নাগরিক আইনের সংস্কার ও সংশোধন করে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ আফগানিস্তান পাকিস্তান বাংলাদেশ থেকে আসা বৌদ্ধ জৈন হিন্দু খ্রিষ্টান ধর্মের মানুষদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া । এছাড়া সহজভাবে বললে পাকিস্তান আফগানিস্তান বা অন্যান্য দেশের যে সমস্ত হিন্দু রয়েছে তাদেরকে সহজভাবে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য এই বিলটি আনা হয়েছে
CAB Bill কি ভারতীয় মুসলিমদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেবে ?
আগেই বলা হয়েছে এই বিলটি নাগরিকত্ব দেওয়ার বিল । দেশের নাগরিকদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার বিল নয় । তাই সহজভাবে বলা যায় যে দেশের কোন নাগরিকেরই নাগরিকত্ব কেড়ে নেবে না CAB Bill ।
CAB বিলটি তাহলে কাদের জন্য ? ভারতে যারা বসবাস করে তাদের জন্য নয়?
পাকিস্তান, বাংলাদেশ বা আফগানিস্তান এই তিনটি বর্ডার শেয়ারিং দেশে “ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত” কোনো সংখ্যালঘু(ওখানে সংখ্যালঘু মানেই হিন্দু,খ্রিস্টান, শিখ,বৌদ্ধ,পার্সী,জৈন) যারা, ক্যাবের সুযোগ নিয়ে ভারতে থাকতে পারবে।
ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিতরা- ভারতে এলে সঙ্গে সঙ্গে ভারতের নাগরিক হয়ে যাবে?
1955 সালে ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য কোন মানুষকে 11 বছর ভারতে থাকতে হত কিন্তু বর্তমানে এই বিল তা কমিয়ে 6 বছর করা হচ্ছে অর্থাৎ অন্য ধর্মের মানুষ ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে কমপক্ষে ছয় বছর ভারতে থাকতে হবে
1955 সালে এই আইনে স্পষ্ট করে বলা আছে ভারতে বসবাসকারী কোন ব্যক্তি যার বাবা ভারতীয় অথবা যিনি ভারতে একটি নির্দিষ্ট সময় জুড়ে বাস করেছেন তারা এই নাগরিকত্ব পাবার যোগ্য
বেআইনি অভিবাসীরা ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন না তাহলে প্রশ্ন ওঠে বেআইনি অভিবাসী কারা?
এদেরকে চিহ্নিত করা হবে দুইভাবে –
1 যদি পাসপোর্ট ভিসা ছাড়া কেউ এই দেশে প্রবেশ করে থাকেন
2 বৈধ নথি নিয়ে প্রবেশের পর নির্দিষ্ট সময়ের বেশি কেউ এই দেশে বাস করে থাকলে তাদেরকে অবৈধ অভিবাসী বলে ধরা হবে।
পরে 1946 সালে বিদেশি আইন এবং 1920 সালে পাসপোর্ট আইন অনুযায়ী তাদেরকে জেলে পাঠানো বা অন্য দেশে ফিরিয়ে দেয়া হবে ।
পৃথিবীর অন্য সব দেশের সব হিন্দু,খ্রিস্টান, শিখ,বৌদ্ধ,পার্সী,জৈন তাহলে ভারতের নাগরিকত্ব পাবে ?
না, একমাত্র ভারতের একমাত্র ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে ।শুধু ওই দেশের “ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত” হিন্দু,খ্রিস্টান, শিখ,বৌদ্ধ,পার্সী,জৈন 6 বছর থেকে নাগরিকত্ব পাবে। অন্য সব দেশের লোক 11 বছর থাকার পর নাগরিকত্ব পাবে।
ওই তিন দেশের মুসলিম নাগরিকরা তাহলে ভারতের নাগরিকত্ব পাবে না?
হ্যাঁ, মুসলিমরাও পাবে। ওই মুসলিমদের 11 বছর ভারতে থেকে তবেই নাগরিকত্ব পাবে। এমনিতেই 2014-2019 এর মধ্যে ওই তিন দেশের 566 জন মুসলিমকে ভারত সরকার নাগরিকত্ব দিয়েছে।
আমাদের দেশ তো “ধর্মনিরপেক্ষ দেশ” তাহলে ওই ওই তিন দেশের মুসলিমরা কেন 11 বছর থাকার পর নাগরিকত্ব পাবে ?
সব হিন্দু,খ্রিস্টান, শিখ,বৌদ্ধ,পার্সী,জৈনকে তো নাগরিকত্ব দেবে না। যারা “ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত”হবে তারা 6 বছরে ভারতের নাগরিকত্ব পাবে। আর ওই তিনটি দেশের রাষ্ট্র ধর্ম হলো ইসলাম। তাহলে একটি মুসলিম দেশে একজন মুসলিম কি “ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত” হবে না ।
আচ্ছা যারা 2014 র আগে থেকে যারা “ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত” হয়ে বাংলাদেশ থেকে এসে ভারতে বাস করছে তাদের কি আবার তাড়িয়ে দেবে??
এই বিলটি স্পেশাল ভাবে ওই নিপীড়িত মানুষদের জন্যই পাশ করা হয়েছে। যাতে তারা এখন নিশ্চিন্তে এই দেশে বসবাস করতে পারে।
তাদের কি ডিটেনশন ক্যাম্পে রেখে দেওয়া হবে ?
CAB এর জন্য কাউকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হবে না। আর এই ডিটেনশন ক্যাম্পের তথ্য সম্পূর্ণ ভুয়ো। কিছু রাজনৈতিক দল নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সাধারণ মানুষকে এই ভয় দেখাচ্ছে।
এই CAB বিল নিয়ে এত বিতর্ক কেন হচ্ছে ?
এই বিলে সবচেয়ে আপত্তিকর’ হিসেবে ধরা হচ্ছে মুসলিমদের । বলা হচ্ছে মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষদের টার্গেট করে এই বিল আনা হয়েছে । কিন্তু সমালোচকরা বলছেন যে আমাদের সংবিধানের 14 নম্বর অনুচ্ছেদ যে সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে , এই বিল একেবারে পরিপন্থী । তবে আমাদের সরকারের বক্তব্য মুসলিম প্রধান দেশে সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বী মানুষেরা ধর্মের জন্য আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য এই বিল ।
এই বিলে আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে ,উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে বহু সংখ্যক বেআইনি বাংলাদেশী ভারতের নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন । আশঙ্কা করা হচ্ছে এর ফলে পাল্টে যাবে আমাদের জনবিন্যাস এর ধরন , ক্ষতি হবে নিজস্ব সংস্কৃতির এবং সর্বোপরি কাজের সুযোগ অনেকাংশে কমে যাবে ।
এই বিল নিয়ে আরো কিছু জানার থাকলে নিচের ভিডিও গুলি দেখতে পারেন
যদি এই বিলটি নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকে নিচে কমেন্ট করুন এবং এই আর্টিকেলটি শেয়ার করে সবাইকে জানিয়ে দিন